শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জামিন পেলেন কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থী।

শহিদুল্লাহ্ আল আজাদ.

স্টাফ রিপোর্টারঃ

খুলনায় চার বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাবন্দী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক (রোল নং ১৭২৫৩৮) এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম (রোল নং ১৭২০৪৬) দুই মামলায় জামিন পেয়েছেন। গত রবিবার ০১ ডিসেম্বর খুলনার মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাড. বেগম আক্তার জাহান (রুকু)। মামলাটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের গত ২৩ সেপ্টেম্বর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও ৫ ডিসেম্বর আড়ংঘাটা থানার গাড়ি রাখার গ্যারেজে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। খানজাহান আলী থানার মামলা নং ০১, ০১ অক্টোবর ২০১৯ ইং (এসটিসি ১১/২০) এবং আড়ংঘাটা থানার মামলা নং ০১, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং (এসটিসি ১৪/২০)।

 

এ ছাড়াও সোনাডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একই সময়ে ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার একটি মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে তাদের দুজনকে সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের দুজনের ১০ বছরের সাজা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ময়মনসিংহ জেলায় তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা রয়েছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানার মামলা দুটিতে তারা জামিন পেয়েছেন।

 

তবে এখনই মুক্তি মিলছে না তাদের। অন্যান্য মামলা থেকে জামিন পেলেই তারা কারামুক্ত হবেন বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন। কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতন করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে এ প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন মুক্তি চান। মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা কারা অভ্যন্তরে অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সাথে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থীদের জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন।

 

পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার জন্য সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. বেগম আক্তার জাহান (রুকু) কে নিযুক্ত করা হয়। গত ০১ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দুই শিক্ষার্থীর বর্তমান শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরেন। পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দুই মামলায় জামিন পাওয়ার পর কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তারা দুর্বিষহ কারাজীবন থেকে মুক্তি পেতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button