
১৩৬ তম গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী রাখাল মেলা, স্থান জগন্নাথপুর, সাতক্ষীরা।
নিউজ ডেস্ক :
একশ’ বছরেরও আগের কথা। এ মাঠের জমি তখন এক ফসলী। ফসল বা ধান কাটা হয়ে গেলে বাকী সারা বছর জমি প্রায় পড়ে থাকে। নানা রকম ঘাস-আগাছা জন্ম নেয়। এলাকার রাখালেরা গরু-ছাগল চরায়। কখনও বা তরমুজ চাষ করা হতো এ মাঠে। গরু চরাণোর ফাঁকে ফাঁকে তরমুজ ক্ষেত দেখাশুনা করা, তরমুজ খাওয়া এমনকি তরমুজ নিয়ে খেলাও করতো রাখালেরা।

একদিন খেলার অবসরে তাদের মাথায় এলো বড় রাখালের কথা। যিনি ধেনু বৎস চরাতেন হাতে নিয়ে কারুকার্য খচিত বাঁশের বাঁশি। তিনি আর কেউ নন, রাখাল সর্দার শ্রীকৃষ্ণ। তরমুজ দিয়েই তাঁকে পূজা দেয়া শুরু হল। রাখালতলার রাখালেরা প্রতি বছর বৈশাখের শেষ দুই দিন এই পূজা দেয়া শুরু করল। আর পূজা উপলক্ষে শুরু হল মেলা। রাখালতলায় রাখাল ঠাকুরের মেলা।ফাঁকা বিলের মাঝখানে বট ছায়ায় কুঁড়েঘরে সহচরী রাধাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শ্রীকৃষ্ণ।
প্রতি বছর বৈশাখের শেষ দুই দিন অদূরবর্তী চারিদিকের গ্রামগুলো থেকে অসংখ্য নর-নারী আসেন যুগল প্রতিমাকে পূজা দিতে। দূর-দূরান্ত থেকে দোকানীরা আসেন নানা রকম পসার নিয়ে। রসমন্ডি, বাতাসা, জিলাপী, পাঁপড়, তালের শাস, গজা বিভিন্ন মিষ্টি সহ হরেক রকমের খাবার। আছে নাগরদোলা, চাকতি ঘোরানো, রিং ছুড়ে সাবান পাউডার জিতে নেয়ার সুযোগ। কাঠ বেত বাঁশের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা সামগ্রী।

আর আছে কিশোরী তরুণীদের চুড়ি, ফিতে, পাউডার সহ সুন্দর হওয়ার নানান উপকরণ। শেষ বিকেলের মজাটাই আলাদা। চারিদিকের গ্রামগুলো থেকে দলবদ্ধ-সারিবদ্ধ হয়ে এঁকে বেঁকে রওনা হয় শত শত সব বয়সী মেলার্থী-পূজারী। তখন আর ধর্মের সীমাবদ্ধতা ওদের বেঁধে রাখতে পারে না। জায়গাটি হয়ে ওঠে মানুষের মিলন মেলা।
রাধাকৃষ্ণের প্রেম যেন মানব-মানবীর চিরায়ত প্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠে। ধর্মের বিভিন্নতা ভুলে গিয়ে ওরা কয়েক গ্রামের মানুষ একত্র হয় মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম প্রেমের ছায়াতলে।পরাণদহা, নেবাখালি, গোদাঘাটা, জগন্নাথপুর, বারোপোতা, শিয়ালডাঙ্গা ও সোনারডাঙ্গা গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত রাখালতলার এই মেলাটি। সাত গ্রামের মাঝে ফাঁকা বিলের মধ্যে।
বর্তমান রাখাল ঠাকুরের এই ক্ষুদে মন্দিরটি দেখাশোনা করছেন পুরোহিত কিরণ চন্দ্র ভট্টাচার্য। তথ্যগুলো তিনিই দিলেন। সাতক্ষীরা সদর বাস টার্মিনাল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। সার্কিট হাউসের পাশ দিয়ে সোজা পশ্চিমে যেতে হবে।
প্রতি বছর বৈশাখের শেষ দুই দিন এই পূজা দেয়া শুরু করল। আর পূজা উপলক্ষে শুরু হল মেলা।